কিছুদিন আগেও ইন্টারনেটে আমরা শুধু পড়তাম, দেখতাম, আর মাঝে মাঝে মন্তব্য করতাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা শুধু পাঠক থেকে পরিণত হলাম অংশগ্রহণকারীতে—ছবি শেয়ার করি, ভিডিও বানাই, লাইভে আসি। কিন্তু এবার ইন্টারনেট বদলাচ্ছে একদম ভিতর থেকে। আসছে এক নতুন অধ্যায়—Web 3.0.
ভাবুন তো, আপনি নিজের অনলাইন পরিচয়ের মালিক, আপনার তথ্য আপনি নিজেই নিয়ন্ত্রণ করছেন, কেউ চাইলেই আপনার ডেটা নিয়ে ব্যবসা করতে পারবে না—এটাই হচ্ছে ওয়েব Web 3.0 ভবিষ্যৎ। এখনকার ইন্টারনেট যেমন কেন্দ্রীয় সার্ভার আর কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণে চলে, ঠিক তার উল্টো এক বিকেন্দ্রীকৃত ইকোসিস্টেম গড়ে উঠছে।
ব্লকচেইন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আর মেশিন লার্নিং—এইসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তির হাত ধরেই আসছে Web 3.0। এই নতুন যুগ শুধু প্রযুক্তি নয়, আমাদের জীবনধারা, যোগাযোগ এবং ব্যবসার ধরণও বদলে দিচ্ছে ধীরে ধীরে। এই প্রতিবেদনে চলুন, একবার জানি—Web 3.0 আসলে কী, আর কিভাবেই বা এটি ধাপে ধাপে বদলে দিচ্ছে আমাদের চেনা ইন্টারনেটকে।
Web 3.0 কি?
Web 3.0 হলো ইন্টারনেটের এমন একটি উন্নত পর্যায়, যেখানে প্রযুক্তি আরও বুদ্ধিমান ও স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই ইন্টারনেট ভার্সনে ব্যবহারকারীরা নিজের তথ্যের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখে, কোনো কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান নয়। তথ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছে ব্লকচেইন প্রযুক্তি, যা ডেটাকে নিরাপদ ও হ্যাক-প্রতিরোধী করে তোলে। Web 3.0 ইন্টারনেট চলে একটি বিকেন্দ্রীকৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে, যেখানে একটি নির্দিষ্ট সার্ভার বা কোম্পানির উপর নির্ভর করতে হয় না।
এই সংস্করণে স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ব্যবহারের মাধ্যমে তৃতীয় কোনো পক্ষ ছাড়াই নির্দিষ্ট শর্তে কাজ সম্পন্ন করতে পারে। ব্যবহারকারীরা নিজেদের তৈরি ডিজিটাল কনটেন্ট যেমন ছবি, ভিডিও বা আর্টের মালিক হতে পারে এবং সেগুলো থেকে আয়ও করতে পারে। Web 3.0-তে লেনদেন হয় ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে, যা তুলনামূলকভাবে দ্রুত, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ।
এই ইন্টারনেট সংস্করণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর চাহিদা ও আচরণ বুঝে কনটেন্ট প্রদর্শন করা হয়। এতে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা আরও জোরদার হয়। এখানে ডিএপস বা বিকেন্দ্রীকৃত অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা নেওয়া যায়। সব ধরনের লেনদেন স্বচ্ছ, স্থায়ী এবং ব্লকচেইনে রেকর্ডকৃত থাকে।
এই ব্যবস্থায় বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ সীমিত হয়, আর সাধারণ ব্যবহারকারীর ক্ষমতা বাড়ে। Web 3.0 ইন্টারনেটকে গণতান্ত্রিক করে তুলছে, যেখানে সবাই সমানভাবে অংশ নিতে পারে। পাশাপাশি, এটি ব্যবহারকারীদের নতুনভাবে উপার্জনের সুযোগও দিচ্ছে। সব মিলিয়ে Web 3.0 হচ্ছে ভবিষ্যতের ইন্টারনেট, যেখানে স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা একসাথে কাজ করে।
Web 3.0 এর কাজ কি?
Web 3.0 হল ইন্টারনেটের একটি আধুনিক পর্যায়, যেখানে ডেটা হবে আরও বুদ্ধিমান, স্বয়ংক্রিয় এবং ব্যবহারকারী-কেন্দ্রিক। এতে ব্লকচেইন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), এবং ডেসেন্ট্রালাইজড নেটওয়ার্কের ব্যবহার বাড়বে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ইন্টারনেট হবে আরও নিরাপদ, ব্যক্তিগত এবং নিয়ন্ত্রণমুক্ত। নিচে ওয়েব ৩.০ এর কাজ বর্ণনা করা হল-
বিকেন্দ্রীকৃত ডেটা নিয়ন্ত্রণ (Decentralized Data Control):
ওয়েব ৩.০ ইন্টারনেটের একটি বিকেন্দ্রীকৃত সংস্করণ। এর মাধ্যমে ডেটা একক কোন সার্ভারে নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এটি ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে ডেটাকে বিভিন্ন নেটওয়ার্কে ভাগ করে রাখে, যার ফলে ব্যবহারকারীরা তাদের তথ্যের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যবহারকারী তার তথ্য বা কনটেন্টের মালিকানার সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারে, যেমন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আপলোড করা ছবি বা ভিডিও। এটি তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা (Security and Privacy):
ওয়েব ৩.০ প্রাইভেসি এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল এনক্রিপশন এবং ব্লকচেইন ব্যবহার করে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সব লেনদেন এবং ডেটা এনক্রিপ্ট করা থাকে, অর্থাৎ তা সহজে হ্যাক করা বা চুরি করা সম্ভব নয়। এছাড়া, ওয়েব ৩.০ ব্যবহারকারীর জন্য একাধিক স্তরের সুরক্ষা ব্যবস্থা যেমন মাল্টি-সিগনেচার প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে পারে। ফলে ডেটা আরও সুরক্ষা নিশ্চিত করে। ব্যবহারকারী নিজেই তাদের ডেটা শেয়ার করতে পারবে এবং সেটি দেখতে পারবে এবং নিয়ন্ত্রণও করতে পারবে।
স্বয়ংক্রিয় লেনদেন (Automated Transactions):
ওয়েব ৩.০ এ স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ব্যবহার করা হয়, যা একটি স্বয়ংক্রিয় চুক্তি তৈরির প্রক্রিয়া। স্মার্ট কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে একদম নির্দিষ্ট শর্তে লেনদেন তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন ছাড়াই সম্পন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যবহারকারী যদি কোনও ডিজিটাল আর্ট ক্রয় করেন, তবে স্মার্ট কন্ট্রাক্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই ট্রান্সফার সম্পন্ন করবে, এবং ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সমস্ত শর্ত পূর্ণ হলে লেনদেনটি কার্যকর হবে। এটি সময়, খরচ এবং ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
ডিজিটাল মালিকানা (Digital Ownership):
ওয়েব ৩.০ ব্যবহারকারীদের ডিজিটাল কনটেন্টের মালিকানা প্রদান করে, যা আগে সম্ভব ছিল না। NFT (Non-Fungible Token) এর মাধ্যমে একটি ছবি, গান, ভিডিও বা অন্য কোনো ডিজিটাল কনটেন্টের মালিকানা নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন আর্টিস্ট তার ডিজিটাল পেইন্টিংটি NFT আকারে বিক্রি করতে পারেন এবং ক্রেতা সেই ছবির একমাত্র মালিক হয়ে উঠবে। NFT ব্লকচেইনে রেকর্ড হওয়ায়, কোনোভাবেই এটি পরিবর্তন করা যায় না।
বিকেন্দ্রীকৃত অ্যাপ্লিকেশন (dApps):
ডিএপস (dApps) হলো এমন অ্যাপ্লিকেশন যেগুলো ব্লকচেইন বা অন্যান্য বিকেন্দ্রীকৃত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করে। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলোর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এগুলি কোনো কেন্দ্রীকৃত সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, Decentraland একটি ডিএপ, যা ব্যবহারকারীদের ভার্চুয়াল জগতে ভূমি কিনতে ও বিক্রি করতে সহায়তা করে। এসব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষা করে এবং তাদের তথ্য সুরক্ষিত রাখে।
বুদ্ধিমত্তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI & Machine Learning):
ওয়েব ৩.০ ব্যবহারকারীর অভ্যাস, পছন্দ এবং অনুসন্ধান ভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও মেশিন লার্নিং ব্যবহারের মাধ্যমে ইন্টারনেটের অভিজ্ঞতাকে আরও বুদ্ধিমান করে তোলে। AI ব্যবহারকারীর আচরণ বিশ্লেষণ করে তাদের আরও প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট এবং সার্চ রেজাল্ট প্রদান করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে খোঁজ নেন, তবে AI আপনাকে অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয় যেমন ব্লকচেইন প্রযুক্তি বা ডিজিটাল ওয়ালেট সম্পর্কে তথ্য দেখাবে।
স্বচ্ছতা (Transparency):
ওয়েব ৩.০ ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে সব ধরনের লেনদেন এবং কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। ব্লকচেইন হলো এমন একটি পাবলিক রেকর্ড যা পরিবর্তন বা মুছে ফেলা যায় না, এবং সকল লেনদেন সবার কাছে উন্মুক্ত থাকে। এটি বিশ্বস্ততার অনুভূতি তৈরি করে, কারণ ব্যবহারকারীরা জানে যে কোনো ধরনের ডেটা বা লেনদেনের ইতিহাস যাচাই করা যাবে এবং সেটা অবিকৃত থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, একজন বিক্রেতা তার পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়ের ইতিহাস ব্লকচেইনে রেকর্ড করতে পারেন, যাতে ক্রেতা স্বচ্ছতার সাথে চেক করতে পারে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং পেমেন্ট সিস্টেম (Cryptocurrency and Payment Systems):
Web 3.0 -এ ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহৃত হয় ডিজিটাল অর্থের লেনদেনের জন্য। এটি কোনো কেন্দ্রীকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে না গিয়ে সরাসরি ব্যবহারকারীর মাঝে লেনদেন সম্পন্ন করতে সক্ষম। বিটকয়েন, ইথেরিয়াম ইত্যাদি ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্লকচেইন প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল, যা লেনদেনের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। Web 3.0-এর মাধ্যমে আপনি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে তাত্ক্ষণিকভাবে অর্থ স্থানান্তর করতে পারেন, সাথে লেনদেনের খরচও কম থাকে।
মেটাভার্স এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (Metaverse and Virtual Reality):
Web 3.0 মেটাভার্সের মাধ্যমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তৈরি করছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা একটি ডিজিটাল পরিবেশে নিজেদের উপস্থিতি অনুভব করতে পারেন। মেটাভার্সের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভার্চুয়াল পরিবেশ থাকবে—যেমন, গেমিং, শপিং, সমাজিক যোগাযোগ ইত্যাদি। এখানে আপনি ডিজিটাল দুনিয়াতে কেনাকাটা করতে পারেন, সঙ্গী-সঙ্গীদের সাথে মিটিং করতে পারেন, এমনকি ভার্চুয়াল ভূসম্পত্তি কিনতেও পারেন। এটি Web 3.0-এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের একটি নতুন রিয়েলিটি এবং অভিজ্ঞতা প্রদান করছে।
Web 3.0 এর ইন্টারনেট ভবিষ্যৎ
Web 3.0 এর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এর ডিসেন্ট্রালাইজড নেচার। কারণ এখানে কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থাকবে না, তাই যে কেউ ইচ্ছা করলে অনলাইনে যেকোন কিছু করতে পারবে। অস্ত্রের বেচাকেনা, অবৈধ এবং অনৈতিক কনটেন্ট ছড়িয়ে দেওয়া, জঙ্গিবাদের অর্থসংস্থান কিংবা তার প্রচার, এমনকি অনলাইনে হুমকী বা অন্য কোন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। কিন্তু এই সব কিছুতেই কোনো ধরনের ট্র্যাকিং থাকবে না, অর্থাৎ কে এটা করেছে এবং কীভাবে করেছে, সে সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যাবে না। আর যদি আপনার সাথে এমন কিছু ঘটে, তাহলে আপনি কাউকে ধরতে বা বিচার চাইতে পারবেন না, কারণ পুরো সিস্টেমের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
এমন একটি সিস্টেম কি কোনো দেশের সরকার চালু হতে দেবে? যদি ওয়েব ৩.০ একদিন পুরোপুরি চালু হয় এবং সমস্ত দেশ এটি নিষিদ্ধ করে দেয়, তবে আপনি যদি ওয়েব ৩.০ এ প্রবেশ করেন, তবে আপনার ইন্টারনেট কানেকশন থেকেই সরকার জানতে পারবে। সরকার চাইবে না যে পুরো ইন্টারনেট সিস্টেম তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাক, তাই এটি তাদের পক্ষ থেকে কখনো অনুমোদিত হতে পারে না।
এছাড়া, যদি আমরা এই বিষয়টি বাদও দেই, তবুও ডিসেন্ট্রালাইজড সিস্টেমের সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্থ হবে বড় বড় টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলো। Web 2.0 এর উত্থান মূলত ব্যবসার উদ্দেশ্যে হয়েছে, আর সেই উদ্দেশ্যেই বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বিশাল পরিমাণ অর্থ লগ্নি করেছে। তাদের উন্নত প্রযুক্তি, সেরা ইঞ্জিনিয়ারদের প্রচেষ্টা এবং বিভিন্ন আপগ্রেডের মাধ্যমে আজকের অবস্থানে এসেছে। কিন্তু Web 3.0 এর ক্ষেত্রে, বড় কোম্পানীগুলো কেন অর্থ লগ্নি করবে? যেখানে তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না, সেখানে তাদের বিনিয়োগের কোনো লাভ হবে না। এই কারণে, ওয়েব ৩.০ এর ডেভেলপমেন্ট অনেকটা থমকে যাবে, এবং এতে বৃহত্তর সুযোগ-সুবিধা থাকবে না। এটি সীমাবদ্ধ থাকবে কিছু স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপের মধ্যে, যেমন আজকের ডার্ক ওয়েবের মতো কিছু জায়গায়। এভাবে ওয়েব ৩.০ হয়তো শুধু কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য একটি অভ্যন্তরীণ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হবে।
ওয়েব ৩.০ এর আরেকটি বড় সমস্যা হলো বর্তমান কম্পিউটার সিস্টেমের উপযোগিতা। কারণ, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রচুর ডাটা ট্রান্সফার হবে—যেমন আপলোড এবং ডাউনলোড। এর ফলে, আপনার পিসি অনেক বেশি ক্ষমতাশালী হতে হবে, অর্থাৎ উচ্চ কনফিগারেশনের কম্পিউটার প্রয়োজন। যদিও ভবিষ্যতে আশা করা যাচ্ছে যে পিসিগুলো আপগ্রেড হয়ে ওয়েব ৩.০ এর জন্য উপযোগী হবে, কিন্তু এখানে একটা বড় সমস্যা আছে—খরচ। এই ধরনের কম্পিউটার কিনতে বা আপগ্রেড করতে গিয়ে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় হবে, যা অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে।
এছাড়া, যখন আপনি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করবেন, তখন তার র্যাংকিং সিস্টেম কেমন হবে? এখানে বড় সমস্যা হলো,ওয়েব ৩.০ তে কোনো এসইও সিস্টেম থাকবে না। সিস্টেম মূলত একটি অনলাইন ভোটিং সিস্টেমে কাজ করবে। এরকম অনেক সার্ভিস আসবে, যারা এই ভোট বিক্রি করবে। আপনি তাদের সার্ভারে টাকা দিয়ে আপনার সাইটে ভোট আদায় করতে পারবেন। অর্থাৎ, যত বেশি টাকা খরচ করবেন, তত বেশি ভোট পাবেন। এই ভোটিং প্রক্রিয়া বেশিরভাগ সময়ই unethical বা নৈতিকতার বাইরে চলে যাবে, ঠিক যেমন ফেসবুকের লাইক সার্ভারের মতো।
আরেকটি প্রশ্ন, যদি আমাদের ডাটা বা সাইটগুলো পুরনো হয়ে যায়, তাহলে কী হবে? অন্য সার্ভার থেকে কি আমরা সেই ডাটা বা সাইটগুলো পেয়ে যাব? এ ক্ষেত্রে টরেন্ট সিস্টেমের কথা ভাবা যেতে পারে, কারণ টরেন্টও পিয়ার টু পিয়ার সিস্টেমে কাজ করে। অনেক পুরনো মুভি বা ভিডিও টরেন্টে থাকে, কিন্তু সেগুলো ডাউনলোড করা যায় না বা লোড হয় না কারণ সিড বা পিয়ার পাওয়া যায় না। কি এই সমস্যা Web 3.0 তে থাকবে? এর সমাধান কি হবে এবং এটি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?
এছাড়া, যদি সিকিউরিটির কথা বলি, তখন একটা প্রশ্ন উঠে আসে—আসলে কি Web 3.0 পুরোপুরি ডিসেন্ট্রালাইজড? শুরুতে এটি অনলাইনে প্রদান করছে কে? তার হাতে কি কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না? এই বিষয়টি নিয়ে টুইটারের সাবেক সিইও Jack Dorsey এর একটি টুইট খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, যা আসলেই আমাদের চিন্তার উদ্রেক করে। এভাবে Web 3.0 তে যেসব সমস্যাগুলি উত্থিত হয়, তা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে পুরো সিস্টেম।