অপারেটিং সিস্টেম

অপারেটিং সিস্টেম কি? এটি কিভাবে কাজ করে

অপারেটিং সিস্টেম হল একটি ডিভাইসের প্রাণ কেন্দ্র। আমাদের মস্তিষ্ক যেমন আমাদের চলাফেরা, কথোপকথন এবং অন্যান্য কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনি অপারেটিং সিস্টেমও একটি ডিভাইসের সকল কার্যকলাপ পরিচালনা করে। এটি সাধারণত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ডিভাইসটির পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সকল নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নিম্নে অপারেটিং সিস্টেম কি? প্রকারভেদ ও এর কাজ নিয়ে আলোচনা করা হলো-

অপারেটিং সিস্টেম কি

অপারেটিং সিস্টেম

অপারেটিং সিস্টেম (OS) হলো একটি সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্ম, যা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। এটি সিস্টেম রিসোর্স পরিচালনা করে এবং ব্যবহারকারীদের অ্যাপ্লিকেশন সুবিধা প্রদান করে। এর মূল কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে প্রসেস ও মেমোরি ব্যবস্থাপনা। এটি ফাইল ও ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে Operating System ছাড়া কোনো কম্পিউটার বা স্মার্ট ডিভাইস পরিচালিত হয় না। এটি গ্রাফিকাল (GUI) এবং কমান্ড-লাইন (CLI) ইন্টারফেসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের সেবা প্রদান করে। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেমগুলোর মধ্যে Windows, macOS, Linux, Android ও iOS উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি OS নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম ও ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়। এটি কম্পিউটিং পারফরম্যান্স ও নিরাপত্তা উন্নত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অপারেটিং সিস্টেম কত প্রকার ও কি কি

অপারেটিং সিস্টেম সাধারণত তাদের কার্যকারিতা ও ব্যবহারের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়।

সিঙ্গেল-টাস্কিং ও মাল্টি-টাস্কিং অপারেটিং সিস্টেম

  • সিঙ্গেল-টাস্কিং (Single-tasking) OS: এটি একক সময়ে শুধুমাত্র একটি কাজ সম্পাদন করতে পারে।
    উদাহরণ: MS-DOS।
  • মাল্টি-টাস্কিং (Multi-tasking) OS: এটি একাধিক কাজ একসঙ্গে সম্পাদন করতে পারে।
    উদাহরণ: Windows, Linux, macOS।

সিঙ্গেল-ইউজার ও মাল্টি-ইউজার অপারেটিং সিস্টেম

  • সিঙ্গেল-ইউজার (Single-user) OS: একই সময়ে শুধুমাত্র একজন ব্যবহারকারী কাজ করতে পারে।
    উদাহরণ: Windows, macOS।
  • মাল্টি-ইউজার (Multi-user) OS: একাধিক ব্যবহারকারী একই সময়ে কাজ করতে পারে।
    উদাহরণ: UNIX, Linux (Server editions)।

ব্যাচ প্রসেসিং ও রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম

  • ব্যাচ প্রসেসিং (Batch Processing) OS: এটি একসঙ্গে একাধিক কাজ ব্যাচ আকারে সম্পন্ন করতে পারে।
    উদাহরণ: IBM OS/360।
  • রিয়েল-টাইম (Real-time) OS: নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পাদন করে, সাধারণত জরুরি সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়।
    উদাহরণ: RTOS, VxWorks, QNX।

ডিস্ট্রিবিউটেড ও নেটওয়ার্ক

  • ডিস্ট্রিবিউটেড (Distributed) OS: একাধিক কম্পিউটারে সংযুক্ত থেকে একসঙ্গে কাজ করে।
    উদাহরণ: Amoeba, Plan 9।
  • নেটওয়ার্ক (Network) OS: নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করে।
    উদাহরণ: Novell NetWare, Windows Server।

এমবেডেড অপারেটিং সিস্টেম

নির্দিষ্ট হার্ডওয়্যারের জন্য ডিজাইন করা হয়, যেমন IoT ডিভাইস, স্মার্টফোন, রোবটিক্স ইত্যাদি।

উদাহরণ: Embedded Linux, FreeRTOS, Android (স্মার্টফোন)।

অপারেটিং সিস্টেম এর কাজ কি

অপারেটিং সিস্টেম এর প্রধান কাজ হল হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের মধ্যকার সম্পর্ক স্থাপন করা।  নিচে অপারেটিং সিস্টেমের কিছু কাজ বর্ণনা করা হলো। 

হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার পরিচালনা

Operating System কম্পিউটারের বিভিন্ন হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যার মধ্যে CPU, RAM, স্টোরেজ ডিভাইস, ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস (যেমন কীবোর্ড, মাউস, প্রিন্টার) ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এটি হার্ডওয়্যারের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার উপাদানের মধ্যে নির্বিঘ্ন সমন্বয় সাধন করে।

প্রোগ্রাম এক্সিকিউশন (Program Execution)

Operating System সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনগুলোর কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি প্রোগ্রাম লোড, কার্যকর এবং প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করে। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারী একটি ওয়েব ব্রাউজার চালু করে , Operating System ব্রাউজারের প্রয়োজনীয় ফাইলগুলি মেমোরিতে লোড করে এবং প্রসেসরের নির্দেশনা পাঠানোর মাধ্যমে কার্যক্রম সম্পাদন করে।

ফাইল ম্যানেজমেন্ট (File Management)

Operating System ফাইল সংরক্ষণ, অনুমোদন এবং ডাটা অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে। এটি ফাইল স্ট্রাকচার পরিচালনা করে এবং ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী ফাইল পরিচালনা করে। একজন ব্যবহারকারী যখন একটি নতুন ফোল্ডার তৈরি করেন এবং তাতে ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করেন, তখন OS সংশ্লিষ্ট স্টোরেজ ঠিকানা নির্ধারণ করে এবং ফাইলটির দ্রুত অ্যাক্সেস নিশ্চিত করে।

প্রসেস ম্যানেজমেন্ট (Process Management)

প্রসেস ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে Operating System একাধিক কার্যপ্রবাহ (process) সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে। এটি মাল্টি-টাস্কিং পরিচালনা করে এবং প্রসেসগুলোর মধ্যে ডেডলক এড়িয়ে চলে। ব্যবহারকারী যদি ভিডিও দেখার পাশাপাশি ওয়েব ব্রাউজারে প্রবেশ করেন, তবে OS প্রতিটি অ্যাপ্লিকেশনকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য CPU বরাদ্দ করে নির্বিঘ্ন পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে।

নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট (Network Management)

Operating System ডিভাইসের নেটওয়ার্ক সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করে, যার মধ্যে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস, ডেটা ট্রান্সফার, এবং নেটওয়ার্ক প্রটোকল ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত। এটি নিরাপদ এবং কার্যকর যোগাযোগ নিশ্চিত করতে নেটওয়ার্ক রিসোর্স নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যবহারকারী যখন ওয়াই-ফাই সংযোগ ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্রাউজ করেন, তখন OS ডেটা প্যাকেট আদান-প্রদানের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে।

সিকিউরিটি ও অ্যাক্সেস কন্ট্রোল (Security & Access Control)

Operating System ব্যবহারকারীর তথ্য ও ডিভাইস সুরক্ষিত রাখতে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এটি মালওয়্যার সুরক্ষা, ফায়ারওয়াল, এনক্রিপশন, এবং মাল্টি-লেয়ার অথেনটিকেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে অনুমোদিত অ্যাক্সেস নিশ্চিত করে।

জনপ্রিয় কয়েকটি অপারেটিং সিস্টেম

অপারেটিং সিস্টেম

জনপ্রিয় কয়েকটি অপারেটিং সিস্টেম নিচে লেখা হলো-

উইন্ডোজ (Windows)

উইন্ডোজ, মাইক্রোসফট কর্তৃক তৈরি একটি জনপ্রিয় গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) Operating System, যা সারা বিশ্বের ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং ল্যাপটপে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো উন্মোচিত হওয়ার পর থেকে, উইন্ডোজ অসংখ্য সংস্করণে উন্নত হয়েছে এবং এখন এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

বৈশিষ্ট্য:

  • ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস: উইন্ডোজ Operating System একটি সহজ, পরিচিত, এবং প্রতিক্রিয়া সঞ্চালনযোগ্য ইন্টারফেস প্রদান করে।
  • সফটওয়্যার সমর্থন: উইন্ডোজ প্ল্যাটফর্মে লক্ষাধিক সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন উপলব্ধ, যার মধ্যে বিভিন্ন প্রফেশনাল সফটওয়্যার যেমন গ্রাফিক্স ডিজাইন, অফিস স্যুট, প্রোগ্রামিং টুলস, গেমস এবং আরও অনেক কিছু রয়েছে।
  • নিরাপত্তা: উইন্ডোজ ১১, উইন্ডোজ ১০ সহ সর্বশেষ সংস্করণগুলিতে শক্তিশালী নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংযোজিত হয়েছে।
  • মাল্টি-প্ল্যাটফর্ম সাপোর্ট: উইন্ডোজ সিস্টেম বিভিন্ন ধরণের ডিভাইসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার মধ্যে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, এবং সার্ভার অন্তর্ভুক্ত।

ম্যাকওএস (macOS)

অপারেটিং সিস্টেম

ম্যাকওএস অ্যাপল কর্তৃক তৈরি একটি UNIX ভিত্তিক Operating System যা শুধুমাত্র ম্যাকবুক, আইম্যাক, এবং অন্যান্য অ্যাপল ডিভাইসগুলির জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ২০০১ সালে প্রথম OS X নামকরণ করা হয়েছিল। বর্তমানে এটি “macOS” নামে পরিচিত।

বৈশিষ্ট্য:

  • উচ্চমানের গ্রাফিক্স এবং ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার।
  • অ্যাপল ইকোসিস্টেমের সাথে আদর্শ সংযোগ স্থাপন করে।
  • উন্নত সিকিউরিটি এবং কার্যক্ষমতা রক্ষা করে।

3. লিনাক্স (Linux)

লিনাক্স একটি ওপেন সোর্স Operating System। এটি ইউনিক্স ভিত্তিক এবং বহুবিধ ডিস্ট্রিবিউশন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন সার্ভার, সুপারকম্পিউটার এবং পিসিতে এর ব্যবহার হয়, এবং এর ওপেন সোর্স প্রকৃতি ব্যবহারকারীদের জন্য কাস্টমাইজেশন এবং উন্নত নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে।

বৈশিষ্ট্য:

  • কাস্টমাইজেশন এবং নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • ওপেন সোর্স এবং লাইসেন্স ফি ছাড়াই ব্যবহারযোগ্য।
  • শক্তিশালী কমান্ড লাইন এবং সার্ভার সাপোর্ট প্রদান করে।

ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম কি

ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম এমন ধরনের সিস্টেম, যার সোর্স কোড সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে। ব্যবহারকারীরা এই কোডটি নিজের প্রয়োজন মতো কাস্টমাইজ করার সুযোগ পান। উদাহরণ হিসেবে, লিনাক্স একটি ওপেন সোর্স Operating System, যা নানা ডিস্ট্রিবিউশনে যেমন উবুনটু ও ফেডোরা ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের সিস্টেমগুলো সাধারণত বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

4. অ্যান্ড্রয়েড (Android)

অ্যান্ড্রয়েড গুগলের তৈরি একটি ওপেন সোর্স মোবাইল Operating System। যা স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, এবং অন্যান্য মোবাইল ডিভাইসগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমান সময়ে এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল Operating System হিসেবে পরিচিত। এটি একটি অ্যাপ ডেভেলপারদের জন্য উদার পরিবেশ প্রদান করে।

  • মোবাইল ডিভাইসে অসংখ্য অ্যাপ্লিকেশন এবং কাস্টমাইজেশন সুবিধা।
  • সাশ্রয়ী মূল্যে প্রচুর ফিচার সহ স্মার্টফোন প্রদান।

5. আইওএস (iOS)

আইওএস, অ্যাপল কোম্পানির তৈরি একটি প্রাইভেট Operating System, যা শুধুমাত্র আইফোন এবং আইপ্যাড ডিভাইসের জন্য নির্মিত। এটি একটি বন্ধ-কোড ভিত্তিক সিস্টেম, যা ব্যবহারকারীদের জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার নিশ্চয়তা প্রদান করে।

রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম কি

রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম (RTOS) হল একটি অপারেটিং সিস্টেম যা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পাদনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি একটি সময়সীমা (ডেডলাইন) অনুসরণ করে এবং সময়মত সাড়া দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়। যাতে সিস্টেমটির রিয়েল-টাইম কার্যকারিতা বজায় থাকে।

(RTOS) এমন একটি অপারেটিং সিস্টেম যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত কাজ সম্পাদন করতে পারে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো টাইম-ক্রিটিক্যাল অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে নির্ভুলতা এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ করা। RTOS সাধারণত কম লেটেন্সি এবং প্রেডিক্টেবল বৈশিষ্ট প্রদান করে।

Read More:-

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *