বর্তমান যুগে ডিজিটাল জগত জুড়ে সবকিছুই অনলাইন ভিত্তিক। এজন্য ব্রান্ড প্রচারের ক্ষেত্রে আজকাল অনলাইন মার্কেটিংয়ের(Online Marketing) ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের(Digital Marketing) মধ্যে একটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing)। যদি আপনি অনলাইনে আয় করতে চান বা প্যাসিভ ইনকামের সন্ধানে থাকেন, তাহলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং আপনার জন্য একটি উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম হতে পারে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing) একটি ধারণা, যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে এবং বর্তমান যুগে এটি অনলাইনের মাধ্যমে আয় করার জন্য একটি জনপ্রিয় উপায়ে পরিণত হয়েছে। যদি সঠিক নিয়মে, স্প্যামিং না করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing) করা হয়, তাহলে এটি স্মার্ট ক্যারিয়ার গঠনের জন্য এক অসামান্য সুযোগ সৃষ্টি করে। আজকের লেখায় আমরা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি, কিভাবে এটি করা হয় এবং এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলি নিয়ে আলোচনা করব। চলুন বিস্তারিতভাবে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানি।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি? (What is Affiliate Marketing?)
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing) বর্তমানে আধুনিক বিপণনের একটি অন্যতম জনপ্রিয় পদ্ধতি। “অ্যাফিলিয়েট” শব্দটি বাংলায় অধিভুক্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়। কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা তৃতীয় পক্ষ হিসেবে প্রমোট করা বা বিক্রি করে কমিশন নেওয়া কে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, একটি প্রতিষ্ঠানের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের আওতায় পণ্য বিক্রির প্রক্রিয়া অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing) হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি সাধারণ মার্কেটিং থেকে কিছুটা ভিন্ন।
এফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing) ধারণাটি ভালোভাবে বুঝতে একটি উদাহরণ দেখা যাক: ধরে নিই, আপনার একটি জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্লগ(Fashion Blog) রয়েছে যেখানে আপনি বিভিন্ন পোশাকের রিভিউ প্রকাশ করেন। যদি আপনি একটি নির্দিষ্ট পোশাক বিক্রেতার সঙ্গে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে অংশ নেন এবং আপনার ব্লগে তাদের পোশাকের লিঙ্ক শেয়ার করেন, তখন আপনার প্রদত্ত লিঙ্ক ব্যবহার করে কেউ যদি সেই পোশাকটি ক্রয় করে, তাহলে আপনি প্রতি বিক্রয়ের জন্য একটি স্থির কমিশন অর্জন করবেন। এই কমিশনের ভিত্তিতে তারা আপনার পণ্যের প্রচারণা চালিয়ে বিক্রয় বাড়ানোর চেষ্টা করে।
কেন এফিলিয়েট মার্কেটিং জনপ্রিয়?(Why Affiliate Marketing is Popular?)
এফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing) জনপ্রিয় কারণ এটি বিনিয়োগ ছাড়াই আয়ের সুযোগ তৈরি করে এবং প্যাসিভ ইনকাম(Passive Income) নিশ্চিত করে। এটি সময় ও স্থানের স্বাধীনতা প্রদান করে, যা ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে ফ্লেক্সিবিলিটি আনে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম যেমন ব্লগ, ইউটিউব, ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে আয়ের সম্ভাবনা বাড়ানো যায়। প্রতিযোগিতামূলক কমিশন ও বোনাস থাকায় এটি অধিক লাভজনক। এফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing) দক্ষতা বৃদ্ধি করে, বিশেষ করে SEO, কনটেন্ট মার্কেটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের(Digital Marketing) ক্ষেত্রে। এটি ট্রেন্ড ও বাজার বিশ্লেষণের সক্ষমতা বাড়িয়ে ভবিষ্যতে ব্যবসার সুযোগ তৈরি করে। দীর্ঘমেয়াদে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়ের সম্ভাবনা থাকায় এটি একটি জনপ্রিয় অনলাইন ইনকাম মডেল। বর্তমান ডিজিটাল ইকোসিস্টেমে এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অনেক কোম্পানি এফিলিয়েটদের জন্য আকর্ষণীয় কমিশন এবং বোনাস অফার করে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম(Amazon Affiliate Program), ClickBank, CJ Affiliate, এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম ভালো কমিশন প্রদান করে।
এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো?(How To Start Affiliate Marketing?)
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing) এর মাধ্যমে আপনি সহজেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলতে পারবেন। এটি এমন একটি ব্যবসার মডেল যা সময়ের সঙ্গে সাথে ক্রমেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। অনলাইনে অর্থ উপার্জনের জন্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায়। এজন্য আপনি কীভাবে অগ্রসর হবেন, তা নীচে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো।
আগ্রহের বিষয় সিলেকশন (নিশ)
এফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing)-এ সফলতার জন্য আপনার অবশ্যই এমন একটি বিষয় বেছে নিতে হবে, যেটির প্রতি আপনার আন্তরিক আগ্রহ রয়েছে। প্রযুক্তি, ফ্যাশন, ভ্রমণ বা খাদ্য — এ ধরনের বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে যা নিয়ে আপনি এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন।
তবে সবচেয়ে কার্যকর হবে, আপনার জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি বিষয় নির্বাচন করা। কারণ, যখন আপনার কোন বিষয়ে আগ্রহ থাকে, আপনি সেই বিষয়ে মানসম্মত কন্টেন্ট তৈরি করতে পারবেন। এর ফলে, আপনার এফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing) কার্যক্রমও সহজ হয়ে উঠবে। এফিলিয়েট নিশ(Affiliate Niche) সিলেকশনে যেসব জানা দরকার-
- প্রথমত, এমন একটি নিশ খুঁজুন যার প্রতি আপনার আগ্রহ আছে।
- নির্বাচিত নিশে এফিলিয়েট লাভজনক হবে কিনা, তা যাচাই করবেন।
- আপনার টার্গেট অডিয়্যান্স কারা, সেটি রিসার্চ করবেন।
- উক্ত নিশে কেমন প্রতিযোগীতা আছে, তা জানা অত্যন্ত জরুরী।
- ট্রেন্ডিং বিষয় গুলোর দিকে নজর দিবেন।
- নির্বাচিত নিশের প্রোডাক্ট মানুষ কিনবে কিনা তা যাচাই করবেন।
ব্লগিং অথবা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং যে কোনও ক্ষেত্রেই নিশ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। নিশ সঠিকভাবে বেছে না নিলে, আপনি এই ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের বদলে ব্যর্থতার শিকার হবেন।
এফিলিয়েট প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করুন
নিশ নির্বাচন করার পর, আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ হবে আপনার নির্বাচিত নিশের সঙ্গে সম্পর্কিত বিশ্বস্ত অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলোর সন্ধান করা। বর্তমানে বহু অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম উপলব্ধ আছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হল: Amazon Associates, ClickBank এবং ShareASale প্রভৃতি।
যখন আপনি একটি এফিলিয়েট প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করবেন, তখন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিটি পণ্যের বিক্রয়ের বিপরীতে তারা কত শতাংশ কমিশন প্রদান করছে, তারা পেমেন্টের ক্ষেত্রে কতটা সৎ এবং নির্ভরযোগ্য, এবং তাদের সঙ্গে এফিলিয়েট হয়ে আপনি কি আপনার ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন এসব বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত।
ওয়েবসাইট তৈরি ও ব্লগ পোস্ট করা।
আপনার নিশের উপর ভিত্তি করে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু করার সময় কিছু মৌলিক দিক বিবেচনা করতে হবে। প্রথমত, নিয়মিত মানসম্মত কন্টেন্ট প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে যাতে দর্শকরা ফিরে আসে এবং তাদের আগ্রহ বজায় থাকে। এই কন্টেন্ট অবশ্যই টার্গেট অডিয়েন্সের রুচি ও চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে, যাতে তারা আপনার ওয়েবসাইটের প্রোডাক্টগুলো কেনার প্রতি আগ্রহী হয়।
ওয়েবসাইটটির ডিজাইন করার সময় এটি অবশ্যই আকর্ষণীয় রাখতে হবে। ভিজুয়াল এফেক্ট এবং সহজ ন্যাভিগেশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করা উচিত। সঠিক ফন্ট, রঙের সংমিশ্রণ এবং ছবি ব্যবহার করে একটি প্রফেশনাল লুক অর্জন করতে হবে।
এফিলিয়েট লিঙ্ক সেটআপ(Affiliate Link Setup)
আপনার ওয়েবসাইটের উপযুক্ত সেকশনগুলোতে এফিলিয়েট লিংকগুলি সঠিকভাবে স্থাপন করা অপরিহার্য। তবে, এই লিংকগুলির সেটআপের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার দর্শকরা যেন সহজেই বুঝতে পারেন যে আপনি এফিলিয়েট লিঙ্ক ব্যবহার করছেন এবং তারা যদি ক্লিক করে কিছু কেনেন, তাহলে আপনি কমিশন পান।
ভিজিটরদের চাপিয়ে দিতে কিংবা লোভনীয় অফারের আশ্বাস দিয়ে লিংকে ক্লিক করতে বাধ্য করা উচিত নয়। এ ধরনের আচরণ আপনার দর্শকদের সাথে বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করবে। ফলস্বরূপ, আপনার সাইটে পুনঃভিজিটিং দর্শকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।
ডিজিটাল মার্কেটিং(Digital Marketing)
যখন আপনি একটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগী প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হন, তখন আপনার জন্য কন্টেন্ট মার্কেটিং করা আবশ্যক। কারণ, আপনার মার্কেটিং প্রচেষ্টা যত বেশি হবে, তত বেশি লক্ষ্যমাত্রা Audience পৌঁছাতে পারবেন, যা সামগ্রিক বিক্রিতে উন্নতি সাধন করবে। এবার, এই মার্কেটিংয়ের দুটি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে:
১. ফ্রি মার্কেটিং
২. পেইড মার্কেটিং
যদি আপনি কোনো অর্থ ব্যয়ের চেষ্টা না করে এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চান, তাহলে এসইও(SEO) (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এসইও এর মাধ্যমে আপনি বিনামূল্যে লক্ষ্যযুক্ত দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হবেন।
অন্যদিকে, যদি আপনি পেইড মার্কেটিং নিচ্ছেন, তবে আপনাকে এই প্রক্রিয়ার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু যেকোনো ধরনের মার্কেটিং করুন কেন না, যদি আপনি সঠিকভাবে সব প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন না করেন, তবে আপনার মূল্যবান সময় এবং প্রচেষ্টা ক্ষয় হবে।
ই-মেইল মার্কেটিং(Email Marketing)
ই-মেইল বা ইলেকট্রনিক মেইল(Electronic Mail) একটি অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে ব্যবহৃত হয়। আপনি ব্যক্তিগত মেইল সার্ভার ব্যবহার করে অথবা ফ্রি মেইল সার্ভিসের মাধ্যমে মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। প্রথমে আপনাকে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যোগ্যতা অর্জন করতে আবেদন করতে হবে। তারপরে, সম্ভাব্য গ্রাহকদের ই-মেইল সংগ্রহ করতে হবে। এরপর, অ্যাফিলিয়েট লিংকসহ একটি মেইল টেম্পলেট তৈরি করে তা সংশ্লিষ্ট মেইল ঠিকানায় পাঠাতে হবে। আপনার সৃজনশীলতার উপর ভিত্তি করে বিক্রির সংখ্যা নির্ধারিত হবে।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং(Influencer Marketing)
আজকাল ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে আপনি অনেক মানুষকে দেখতে পাবেন, যারা শর্ট ভিডিও বা রিলস তৈরি করে দর্শকদের উপর প্রভাব ফেলে। যদি আপনি একজন ইনফ্লুএন্সার হন, তবে শর্টস বা রিলস ভিডিওর মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট পণ্যগুলোর প্রচার করতে পারেন। এর ফলে, আপনি মনিটাইজেশন থেকে আয় করার পাশাপাশি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকেও উপার্জন করতে সক্ষম হবেন।
এফিলিয়েট মার্কেটিং কেন করবেন?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং আপনি বিভিন্ন কারণে করতে পারেন। এটি অনলাইনে ডলার ইনকাম করার জন্য অন্যতম সফল মাধ্যম। একজন মার্কেটারের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কেন করা দরকার তা নিচে বর্ণনা করা হলো।
অভিজ্ঞতা অর্জন
একজন মার্কেটার হিসেবে যদি আপনার উদ্দেশ্য ভবিষ্যতে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠা গড়ে তোলা হয়, তাহলে শুধুমাত্র তাত্ত্বিক ধারণার উপর ভিত্তি করে কাজ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব একটি নতুন ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। যদি কোনও শুরু হওয়া ব্যবসা অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সময় এবং বিনিয়োগ, উভয়ই ব্যর্থতা বরণ করবে। এ কারণে, ব্যবসা পরিচালনার প্রক্রিয়া এবং তার মুখোমুখি হওয়া বিভিন্ন সমস্যার জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing) মাধ্যমে একজন মার্কেটার যথেষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন যা তাকে ব্যবসায়ীক মডেলের সঠিক ধারণা দেবে। এর ফলে নতুন কোনো ব্যবসা স্থাপন করা তার জন্য সহজ হয়ে উঠবে।
ক্যারিয়ারের তৈরি
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing) কেবল একটি অনলাইন আয় অর্জনের পদ্ধতি নয়, বরং এটি একটি সুরক্ষিত ও সফল ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য একটি কার্যকর মাধ্যমও। এর মাধ্যমে মার্কেটারকে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে: সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO), ওয়েবসাইট রক্ষণাবেক্ষণ, মার্কেটিং কৌশল, অর্থনীতি বিশ্লেষণ এবং কনটেন্ট তৈরি।
ইনকাম সোর্স
প্রতিটি মানুষের জন্য একটি শক্তিশালী আয়ের উৎস অর্জন করা। আমরা লেখা পড়া করি এই উদ্দেশ্যে, যাতে নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পারি। সরকারি অথবা বেসরকারি চাকরি থেকে বাইরে এসে স্বাধীনভাবে আয় করার একটি মৌলিক মাধ্যম হলো ব্যবসা। তবে, মূলধনের অভাব ও অন্যান্য প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে আমাদের কাছে সবসময় ব্যবসা করার সুযোগ থাকে না। এই সকল চ্যালেঞ্জের উপরে উঠে, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing) আমাদের জন্য একটি নিরাপদ আয় উৎস হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সারাংশ হল, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আমরা একদিকে আমাদের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করতে পারব এবং অন্যদিকে নতুন আয়ের উৎস তৈরি করতে সক্ষম হব।
জনপ্রিয় এফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস
CJ Affiliate
প্রোগ্রামটি মূলত ডিজিটাল পণ্যগুলির উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে। যদি আপনি ডিজিটাল পণ্য সম্পর্কিত এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে যুক্ত হতে চান, তবে CJ Affiliate আপনার জন্য একটি সর্বোত্তম বিকল্প হতে পারে। ডিজিটাল পণ্যের উদাহরণ হিসেবে ডোমেইন নাম, হোস্টিং পরিষেবা, ভিপিএস, সার্ভার এবং ওয়েবসাইট থিম উল্লেখ করা যেতে পারে।
Amazon Associates
Amazon Associates বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে একটি। এখানকার সাইটে নিবন্ধন করে আপনি এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। Amazon-এর বিভিন্ন পণ্যের জন্য আপনার অ্যাফিলিয়েট হতে পারবেন, এবং আপনি পৃথিবীর যে কোনো কোণ থেকে এই কাজ করতে সক্ষম।
eBay Partner
eBay Partner প্রোগ্রামটি মূলত শারীরিক পণ্য বিক্রির জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি অ্যামাজনের মতোই কাজ করে এবং এখানে বিপুল পরিমাণে কেনাবেচা ঘটে। আপনি eBay-এর যেকোনো পণ্যের জন্য এই প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারেন। আরওবিশেষ, eBay একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান এবং এখানে আপনার অর্থ হারানোর সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।
Clickbank
এটি মূলত লীড জেনারেশন, ডিজিটাল সার্ভিস, রিলেটেড এফিলিয়েট প্রোগ্রাম। এখানে আপনাকে কোন পণ্য বিক্রি করতে হয় না। বরং নির্দিষ্ট টার্গেট অনুযায়ী কোম্পানির গুলোর পণ্য বা সার্ভিস প্রচারের জন্যই আপনাকে টাকা দিয়ে থাকে। এ জাতীয় পণ্যের মধ্যে ওয়েবসাইট প্রমোশন, নতুন নতুন অ্যাপ প্রমোশন, এবং বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল সার্ভিস প্রমোশনের জন্য কাজ করা হয়।
এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ
অনলাইন জগতে কাজ করা মানে আসলে সমগ্র বিশ্ব আপনার বাজারে পরিণত হচ্ছে। স্রেফ একটি অনলাইন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা এখানকার মূল লক্ষ্য। 2017 সালে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের বাজারে আয় ছিল $৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এবং 2023 সালে এসে তা প্রায় $17 বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, 2030 সালের মধ্যে এই পরিমাণ $36.9 বিলিয়নে পৌঁছাতে পারে। ফলে, আমরা প্রত্যাশা করতে পারি যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং 2030 সালের মধ্যে একটি বিশ্বস্ত এবং লাভজনক পেশা হয়ে উঠবে।
বর্তমান যুগে ঘরে বসে আয় করার একটি কার্যকরী উপায় হলো আফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing)। যদি আপনি আফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে সম্পূর্ণভাবে দক্ষ হন, তবে আপনি লক্ষাধিক টাকা উপার্জনের সুযোগ পাবেন। কিন্তু এর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানাটা প্রয়োজন হয়। সময় ব্যয় করা, নিজেকে আপডেট রাখা এবং বিভিন্ন আফিলিয়েট পণ্য নির্বাচন করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। আপনি কীভাবে মার্কেটপ্লেসে লিড বা বিক্রি বৃদ্ধি করবেন, সে সম্পর্কে বিশদভাবে জানলে আপনার সফলতা অর্জন সহজতর হবে। সুতরাং, অধ্যবসায় করুন; সফলতা ধীরে ধীরে আপনি নিশ্চয়ই পাবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধা অসুবিধা
প্রতিটি সেক্টরের মত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এও সুবিধা অসুবিধা আছে যা নিচে দেওয়া হলো।
সুবিধা
- বিনিয়োগ ছাড়াই আয়ের সুযোগ – নিজস্ব পণ্য বা সার্ভিস ছাড়াই শুধুমাত্র অন্যদের পণ্য প্রচার করে কমিশন অর্জন করা যায়।
- প্যাসিভ ইনকাম (Passive Income) – একবার ভালোভাবে সেটআপ করলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয় করা সম্ভব।
- কাজের স্বাধীনতা ও ফ্লেক্সিবিলিটি – যেকোনো জায়গা থেকে এবং নিজের সুবিধামতো সময়ে কাজ করা যায়।
- বহুমুখী আয়ের উৎস – ব্লগ, ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল মার্কেটিংসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আয়ের সুযোগ রয়েছে।
- স্কেলযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসা – ট্রাফিক ও কনভার্শন বাড়িয়ে এফিলিয়েট ইনকাম অনেকগুণ বৃদ্ধি করা যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক।
অসুবিধা
- প্রতিযোগিতা বেশি – অনেকেই এফিলিয়েট মার্কেটিং করছে, তাই ভালো র্যাঙ্ক ও ট্রাফিক পাওয়া কঠিন হতে পারে।
- ইনকাম অনিশ্চিত – শুরুতে আয় কম হতে পারে এবং স্থিতিশীল ইনকাম নিশ্চিত করতে সময় লাগে।
- নির্ভরশীলতা অন্য কোম্পানির ওপর – কমিশন রেট, কনভার্শন রুল, বা পেমেন্ট পলিসি কোম্পানিগুলো পরিবর্তন করতে পারে, যা আয়ে প্রভাব ফেলে।
- SEO ও মার্কেটিং দক্ষতা প্রয়োজন – ভালো আয় করতে হলে কন্টেন্ট মার্কেটিং, SEO ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের দক্ষতা দরকার।
- পেমেন্ট জটিলতা ও ডিলে হতে পারে – কিছু এফিলিয়েট নেটওয়ার্কে পেমেন্ট প্রসেস দীর্ঘ সময় নিতে পারে, বিশেষ করে যদি মিনিমাম পেআউট লিমিট বেশি হয়।
সঠিক পদ্ধতিতে এফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing) করতে পারলে অল্প সময়ের মধ্যেই ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব। কিন্তু তার পূর্বে এটি কি এবং কীভাবে কাজ করে সে বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা থাকতে হবে। অন্যথায় স্প্যাম মার্কেটিং(Span Marketing) দিয়ে ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যেতে পারে।